রংপুরের গঙ্গাচড়ার মোহনা গ্রামের গৃহবধূ রমা আক্তার। তার পাঁচটি গরু। তিনি তার গরুগুলোকে আলু খেতে দেন। মাঝে মধ্যে সময় না পেলে সিদ্ধ ছাড়াই খেতে দেন আলু। শুধু রমা নয়, এমন অনেকেই এখন গরুকে দিচ্ছেন আলু খেতে। মূলত হিমাগারে জায়গা না থাকা, ও দরপতন হওয়ায় এখন আলুকে গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন কৃষকরা।
রমার স্বামী সামিউল ইসলাম বলেন, এবার দুই বিঘা জমিতে ক্যারেজ জাতের আলু আবাদ করি। আবাদে খরচ হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। বাজারে দাম কম হওয়ায় গোখাদ্যের বিকল্প হিসেবে আলুর ব্যবহার করছি। রমা-সামিউল দম্পতির মতোই গরুকে আলু খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে লোকসানের বোঝা হালকা করার চেষ্টা করছেন তারাগঞ্জ উপজেলার মেনানগর গ্রামের কৃষক আজারুল ইসলাম। আজাহারুল বলেন, দেড় দোন (৩৬ শতক) জমিতে এবার আলুর আবাদ করি। ফলনও ভালো হয়, কিন্তু বর্তমানে দাম উঠছে না। এদিকে হিমাগারে জায়গা না পেয়ে ঘরেই আলু রেখেছেন আজাহারুল। দ্রুত পচনশীল হওয়ায় এখন উপায় না পেয়ে সেই আলু গরুকে খাওয়াচ্ছেন।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে (২০২৪-২৫) জেলায় ৬৬ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন হয়েছে ১৯ লাখ ৪৩ হাজার ৭১০ টন আলু। গতবছর ৫৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। আর উৎপাদন হয়েছিল ১৫ লাখ ২৬ হাজার টন আলু। এবার আলু উৎপাদন হয়েছে বেশি।
এরমধ্যে জেলায় ৪০টি কোল্ড স্টোরেজের ধারণ ক্ষমতা ৪ লাখ ১৬ হাজার ৩০০ টন। ২৩ মার্চ পর্যন্ত কোল্ড স্টোরেজগুলোতে আলু সংরক্ষণ হয়েছে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৩৬০ টন। চলতি বছর স্টোরেজের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে আলু উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৫ গুণ। ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। গতবছর এসময় যে আলু ২৫-৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, বর্তমানে সে আলু ১০ টাকা থেকে সাড়ে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের রঘু বাজারের বাসিন্দা ভূপাল চন্দ্র বর্মণ জানান, এবছর তিনি ২৪ শতক জমিতে আলুর আবাদ করেন। সময়মতো বুকিং দিতে না পারায় কোল্ড স্টোরেজে বেশি আলু রাখতে পারেননি। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু ১০ টাকা থেকে সাড়ে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে ১৫ টাকার ওপরে। তাই গোখাদ্য হিসেবে আলু সিদ্ধ করে গরুকে খাওয়াচ্ছেন। অন্য খাবার কম দিয়ে আলু খাওয়াচ্ছেন বেশি।
তবে গরুকে আলু না খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। রংপুর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোশাররফ হোসেন বলেন, মানুষের খাবার আলু হচ্ছে শর্করা জাতের। কাঁচা আলু খাওয়ালে গরুর পেটের অসুখসহ অন্যান্য অসুখ হতে পারে। তাই সিদ্ধ হোক আর কাঁচা হোক, গরুকে আলু না খাওয়ানো ভালো।
রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, কৃষকরা ভালো দাম পাওয়ায় এবার গতবারের চেয়ে বেশি জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। এছাড়া বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় জেলায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।
বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন